Breaking News
recent

হতাশা মানেই হেরে যাওয়া - The Desperation Effects

হতাশা মানেই পতন,
হতাশা মানেই হেরে যাওয়া...

দুশ্চিন্তাই মানুষের হতাশার কারণ। সফলতার পেছনে ছুটছেন কিন্তু সাফল্য নামক বস্তুটি যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে চার দেয়ালের ভেতর থেকেই আকাশ খোঁজার চেষ্টা করেন। আর ভাবেন, ‘নাহ, হবে না। আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ এমন ভাবনায় আটকে যাওয়াকেই বোধ হয় লোককথায় বলে, ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়।’ আর মনোবিজ্ঞানীরা এমন নেতিবাচক চিন্তাভাবনায় ঘুরপাক খাওয়াকে বলেন, ‘অটোমেটিক নেগেটিভ থটস’ বা ‘এএনটি’।

Desperation Effects
মানুষের মস্তিষ্কে অনেক সময় এমন নেতিবাচক চিন্তা স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারে বৈকি। ১৯৬০ সালের দিকে যাঁরা ‘কগনিটিভ থেরাপি’ শুরু করেছিলেন, সেই মনোবিজ্ঞানীদের একজন অ্যারন বেক এএনটি নিয়ে এমনটিই বলেছেন। নেতিবাচক চিন্তা সামাল দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এই মনোবিজ্ঞানীর মতামত প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। এখানে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।

অ্যারন বেক বলেন, এএনটি মানুষের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাময় দিকগুলো নষ্ট করে দেয়। এটি অনেকটা অন্তর্ঘাতমূলক। এএনটি মানুষের মস্তিষ্কে একটা চক্র তৈরি করে, যেটি বারবার ঘুরেফিরে আসে। তিনি আরও বলেন, শৈশবেই মানুষের মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ ঘটে, এমন ধারণা ভুল। মানুষ জীবনভরই শেখার মধ্য দিয়ে যায়। তাঁর মতে, প্রত্যেকের ভেতর একটা মানুষ বাসা বেঁধে থাকে যে কখনো বাস্তবের মানুষটিকে উত্সাহ দেয় আবার অনেক ক্ষেত্রে নিরুত্সাহিতও করে।

এদিকে, লন্ডনের একদল বিজ্ঞানীর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন, তাঁদের মস্তিষ্কে নতুন একটি অংশ তৈরি হতে পারে, যা তাদের নতুন করে প্রেরণা দেয়। প্রক্রিয়াটির পুরোটাই অবশ্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইচ্ছা আর ঘুরে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ের ওপর নির্ভর করে।

এমন মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার মজার কিছু পথ বাতলেছেন অ্যারন বেক। তাঁর মতে, এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলে প্রথমত, নিজের মধ্যে থাকা নেতিবাচক চিন্তাগুলোর বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, এমন কাউকে কল্পনা করতে পারেন, যে আপনাকে নেতিবাচক ভাবনা ভাবতে বাধ্য করে। সবচে ভালো হয়, মনে মনে কারও মুখ এঁকে ফেললে। চাইলে তার একটা কণ্ঠও ভেবে নিতে পারেন। এমনটি করলে ভাবতে সুবিধা হয় যে নেতিবাচক ভাবনাগুলো আপনি ভাবছেন না। এমন কেউ আপনার কাজে বাধা দিচ্ছে, যে কিনা আপনার ভালো চায় না।

এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন অ্যারন বেক, ‘আমি জানি না আপনারা কীভাবে ভাবছেন। তবে আমি এমন একটা অবয়ব তৈরি করেছি যেন আমার ভেতরের মানুষটি আকারে খুব ছোট।

তার ন্যাড়া মাথা, বড় বড় চোখ আর দেখতে খুব বিদঘুটে। তার চেহারায় চিন্তার একটা ছাপ দিয়েছি এবং সে কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। আমি তার একটা নামও দিয়েছি!’

অ্যারন জানান, তাঁর ভেতরের সেই মানুষটিও একইভাবে তাঁকে নতুন কোনো উদ্যোগে বাধা দেয়। তিনি বলেন, ‘যখনই আমি রোমাঞ্চকর কিছু করতে চাই, তখনই সে আমাকে বাধা দেয়। বলে, “তোমার বয়স হয়েছে, এই কাজ তোমার জন্য নয়।” এমন যন্ত্রণা সহ্য করা সত্যি কষ্টের।’ ভেতরের মানুষটির সঙ্গে লড়াইয়ের এই প্রক্রিয়া তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে শিখেছেন বলেও জানিয়েছেন অ্যারন।

‘নিজের ভেতরে নেতিবাচক কথা বলা মানুষটির একটা সম্ভাব্য চেহারা আঁঁকতে বলায় অনেককেই স্কুলজীবনের প্রধান শিক্ষকের ছবি আঁঁকতে দেখে অবাক হয়েছি!’মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এমন ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চিকিত্সায় কাজ করেছিলেন অ্যারন বেক। সেই সময় তিনি তাঁর এই ‘ভেতরের মানুষ’ বের করে আনার ফর্মুলা কাজে লাগান। অ্যারন সবাইকে মনের মধ্যে আসা নেতিবাচক চিন্তাগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে বলেন। এরপর এমন কারও মুখ কল্পনা করতে বলেন, বাস্তব জীবনে যে বা যারা এমন নেতিবাচক কথাবার্তা বলতে পারে।

তার একটা ছবিও এঁকে ফেলার পরামর্শ দেন। অ্যারন বলেন, ‘অনেককেই তাঁদের স্কুলজীবনের প্রধান শিক্ষকের ছবি আঁকতে দেখে অবাক হয়েছি!’

অনেকেই অনেকভাবে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকেন। তবে, এসব বিষয়ে একটা সাধারণ মিল আছে। এই আচরণগুলোতে মিল থাকলে ভাবতে হবে আপনিও এই সমস্যায় আক্রান্ত। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বরং মোকাবিলা করুন। বেকের পরামর্শ অনুসরণ করেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তার আগে জেনে নিন কয়েকটি ভাগে ভাগ করা এএনটি বা স্বয়ংক্রিয় নেতিবাচক চিন্তার কিছু ধরন—

স্বপ্নগুলো সাদা-কালো:
‘আমি পুরোপুরি ব্যর্থ।’ ‘আমি ছাড়া বাকি সবাই এই কাজ করতে পারবে।’

অন্যের মন পড়া:
‘তাঁরা মনে করে আমি একঘেয়ে।’ ‘তাঁদের নিশ্চয়ই আমাকে নির্বোধ মনে করা উচিত।’

হাত-পা ছেড়ে দেওয়া:
‘চেষ্টা করে লাভ নেই। এতে কোনো কাজ হবে না।’

অতি সরলীকরণ:
‘এই সম্পর্ক টেকে নাই। তাহলে আর কারোর সঙ্গেই আমার মিল হবে না।’

ইতিবাচক কিছু চোখে না পড়া:
‘আমি হয়তো ভালো মা। তাতে কী? এটা সবাই-ই হতে পারে।’

নাটুকে স্বভাব:
‘আমি আমার ব্যাগ খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছি, বুড়িয়ে যাচ্ছি।’

অবাস্তব প্রত্যাশা:
‘আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে, ক্লান্ত হলেও থামা যাবে না।’

নিজেকে দোষ দেওয়া:
‘দেখে মনে হচ্ছে সে ক্ষেপে গেছে। আমিই হয়তো তাকে খেপিয়ে দিয়েছি।’


Tags: হতাশার কূফল, হতাশার কারণ, হতাশার ক্ষতি, Hotashar karon, Hotasha dur korar upay, Hotasha keno hoy, Hotashar kufol, The desperation, About of desperation.

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.